মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন ও কাজ

 মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন ও কাজ




মাইটোকন্ড্রিয়া কী?

মাইটোকন্ড্রিয়া দ্বি-স্তরবিশিষ্ট আবরণী ঝিল্লি দ্বারা সীমিত সাইটোপ্লাজমস্থ যে অঙ্গাণু তে ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি ঘটে থাকে এবং শক্তি উৎপন্ন হয় সেই অঙ্গাণুকে মাইট্রোকন্ডিয়া বলে। (ইংরেজি: Mitochondria) এটি এক প্রকার কোষীয় অঙ্গানু, যা সুকেন্দ্রিক কোষে পাওয়া যায়।

মাইটোকন্ড্রিয়ার আবিষ্কার

মাইটোকন্ড্রিয়ার আবিষ্কার নিয়ে মতভেদ আছে। একটি মতে, বিজ্ঞানী অল্টম্যান ১৮৯৪ সালে ইহা আবিষ্কার করেন। আবার কারও মতে, গ্রিক বিজ্ঞানী সি. বেন্ডা ১৮৯৮ সালে মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কার করেন।আবার আরেক মতে Albert von kolliker (কলিকার) ১৮৫০ সালে আবিষ্কার করেন।] এন্ডোসিম্বায়োটিক থিওরী অনুযায়ী মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড বহু আগে মুক্তজীবি ব্যাক্টেরিয়া ছিল। যারা এন্ডোসিম্বায়োন্ট হিসেবে অন্য কোষের মধ্যে ঢুকে পরে এবং একসময় কোষেরই অংশ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মাইটোকন্ড্রিয়া এসেছে প্রোটিওব্যাক্টেরিয়া থেকে এবং প্লাস্টিড এসেছে সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থেকে! এর জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক প্রমাণ দাড় করিয়েছেন। এগুলো থেকে বুঝা যায় বুঝা যায় যে মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড ব্যাক্টেরিয়া থেকে এসেছে।


মাইটোকন্ড্রিয়ার অবস্থান

লোহিত রক্তকণিকা এবং সীভনল ব্যতীত সকল প্রকার শক্তিউৎপাদী কোষের প্রোটোপ্লাজম এ সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানু হিসেবে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে।

আয়তন ও সংখ্যা

আকারভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার আয়তন বিভিন্ন রকম।বৃত্তাকার মাইট্রোকন্ড্রিয়ার ব্যাস ০.২ µm থেকে ২ µmসূত্রাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৪০ µm থেকে ৭০ µmদন্ডাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৯ µm থেকে এবং প্রস্থ ০.৫ µm হতে পারে।

সাধারণত প্রতি কোষে এর সংখ্যা ২০০-৩০০'র মত থাকে। যকৃৎ কোষে ১০০০ বা ততোধিক থাকে।

 

মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন

মাইটোকন্ড্রিয়ার ভৌত গঠন:

নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে মাইটোকন্ড্রিয়া গঠিত-

. আবরণী :মাইটোকন্ড্রিয়া একটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট আবরণী (ঝিল্লি বা মেমব্রেন) দিয়ে আবৃত থাকে। মেমব্রেনটি লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ার প্রকৃতির। বাইরের স্তরটি সোজা কিন্তু ভেতরের স্তরটি কেন্দ্রের দিকে অনেক ভাঁজবিশিষ্ট। ভেতরের মেমব্রেনের এ ভাঁজগুলোকে বলা হয় ক্রিস্টি।

. প্রকোষ্ঠ : দুই মেমব্রেনের মাঝখানের ফাঁকা স্থানকে বলা হয় বহিঃস্থ কক্ষ বা আন্তঃমেমব্রেন ফাঁক ভেতরের মেমব্রেন দিয়ে আবদ্ধ অঞ্চলকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ বা ম্যাট্রিক্স।

. ATP-Synthases ETS : ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATP- Synthases নামক গোলাকার বস্তু আছে। এতে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া সব ক্রিস্ট্রিব্যাপী অনেক ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম অবস্থিত। আগে এদের একসঙ্গে অক্সিসোম হিসেবে অভিহিত করা হতো।

৪. রাইবোসোম : মাইটোকন্ড্রিয়াতে এনজাইম সংশ্লেষের জন্যে 70S রাইবোসোম পাওয়া যায়।

৫. ম্যাট্রিক্স বা মাতৃকাঃ মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিতরে এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে, যাকে ম্যাট্রিক্স বা মাতৃকা বলে। এ মাতৃকা লিপিড বা প্রোটিন দিয়ে তৈরী। এতে ৭০ টিরও অধিক এনজাইম এবং ১৪ টির মত কো-এনজাইম থাকে।

৬. মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA:মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA  একটি চক্রাকার দ্বিসুত্রক অণু। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্যে একে মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA বলে।

 

৭. অন্যান্য উপাদান : এ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রোটিন, লিপিড, বিভিন্ন ধরনের এনজাইম, কো-এনজাইম, ‘RNA’ ইত্যাদি থাকে।



মাইটোকন্ড্রিয়ার রাসায়নিক গঠন : মাইটোকন্ড্রিয়ার শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গ্লিসারাইডসমূহ, ৪% কলস্টেরল, লিপিডের মধ্যে ৯০% হচ্ছে ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন এবং কিছু অজৈব পদার্থ। মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লি লিপো-প্রোটিন সমৃদ্ধ। মাইটোকন্ড্রিয়ায় প্রায় ১০০ ধরনের এনজাইম ও কো-এনজাইম রয়েছে।


 


 

 

 

 


মাইটোকন্ড্রিয়া কাজঃ

১. সবাত শ্বসনের তৃতীয় পর্যায় ক্রেবস চক্র ও চতুর্থ পর্যায় ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইনের বিক্রিয়া সমূহ মাইটোকন্ড্রিয়াতে সংঘটিত হয়। এর মাধ্যমে ATP(Adenosine Triphosphate)অণু সংশ্লেষ করে যা সকল শক্তির উৎস বলে মাইটোকন্ড্রিয়াকে Power house of Cell বা কোষের শক্তিঘর বলে।

ইহা লেসিথিন এবং ফসফাটাইডাইল-ইথানলামিন নামক দুটি ফ্যাট সংশ্লেষে সহায়তা করে। ইহা ফ্যাটি অ্যাসিড বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।

২. ইহা জীবদেহে জৈবদ্যুতি (Bio luminescence)ঘটায়। অর্থাৎ মাইটোকন্ড্রিয়া জোনাকির দেহে লুসিফেরন নামক প্রোটিনকে লুসিফেরেজ নামক উৎসেচক দ্বারা জারিত করে ফসফরাসের বিয়োজন ঘটায় যা আলোক সৃষ্টি করে। এখানে হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিনের হিম (Haem)অংশ সংশ্লেষিত হয়।

৩. কিছু পরিমাণ RNA DNA উৎপন্ন করতে পারে।

৪ প্রয়োজনে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটিয়ে কাজে সহায়তা করে।

৫. প্রাণিদেহে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

৬. কোষের বিভিন্ন অংশে ক্যালসিয়াম আয়নের (Ca²+)সঠিক ঘনত্ব রক্ষা।

৭. শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে অংশগ্রহণ করে।

৮. মাইটোকন্ড্রিয়া স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করে।

৯. মাইটোকন্ড্রিয়া আমাদের কোষের জন্য শক্তি তৈরির সাথে সাথে এক ধরনের আয়নিত অণুর সৃষ্টি করে যাকে ফ্রী রেডিকেল বলে। তারা স্টেম সেল-এর পরিণত হওয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণে নিরাপত্তা প্রতিক্রিয়া তৈরিতেও কাজ করে

১০. রক্ত কণিকা ও হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করা।

১১. বিভিন্ন ধরনের পদার্থ , যেমন- Ca, K এর সক্রিয় পরিবহনে সক্ষম।

 

মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের 'পাওয়ার হাউস' বলা হয় কেন?

মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলার কারণ:

সব জীব শ্বসনের মাধ্যমে শক্তি (ATP) উৎপাদন করে। উৎপাদনে সাহায্য করাই মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ। শ্বসনের সবচেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদন হয় স্ববাত শ্বসনের ক্রেবস চক্রে। আর ক্রেবস চক্রে অংশগ্রহণকারী সব উৎসেচক মাইটোকন্ড্রিয়ানে থাকায় এর বিক্রিয়াগুলো এ অঙ্গাণুতেই সংঘটিত হয়। এ জন্য মাইটোকন্ড্রিয়ানকে কোষের পাওয়ার হাউস বা শক্তিঘর বলা হয়।

 

 

Comments

Popular posts from this blog

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা

ডাবের পানির পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা