ডাবের পানির পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা

 


ডাবের পানির পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা

ডাবের পানিকে বিবেচনা করো হ একটি অসাধারণ পানি হিসেবে। ডাবের ভেতরের স্বচ্ছপানি পানীয় হিসেবে খুবই সুস্বাদু। কচি ডাবের ভেতরকার রসই হল ডাবের পানি। ডাবের পানি যেকোনো কোমল পানীয় থেকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ। প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান থাকার জন্য বাড়ন্ত শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য ডাবের পানি যথেষ্ট উপকারী। কেবল গরমের সময়ই নয়, সারা বছরই পান করতে পারেন ডাবের পানি। কারণ ডাবের পানি শুধু পানীয় হিসেবেই উপকারী তা নয়, ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অনেক জটিল রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই ডাবের পানির উপকারিতার কথা সবার জানলেও এর অপকারিতার কথা অনেকেই জানেন না।

ডাবের পানির পুষ্টিগুণ

তৃষ্ণা মিটানোর পাশাপাশি নানা ধরনের উপকারী পুষ্টি উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি। আমাদের দেশে সহজলভ্য ডাবের পানির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। একটি সাধারণ কচি ডাবে আকারভেদে ২০০ থেকে ১০০০ মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। ডাবের পানিতে অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, আয় রন, ম্যাংগানিজ, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৩ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম, ০.১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ১, ০.০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও খাদ্যশক্তি ২৩ কিলোক্যালরি থাকে। 

নিম্নে ডাবের পানির বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. ওজন কমাতে:
ওজন কমাতে ডাবের পানির চমৎকার ভূমিকা রয়েছে। এতে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল  থাকে না ও এতে চিনির পরিমাণও অল্প থাকায় নিশ্চিন্তে পান করা যায় যতটুকু ইচ্ছা। এছাড়াও ডাবের পানির চর্বি ধ্বংস করতেও সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান থাকায় বাড়ন্ত শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই উপকারী এই ডাবের পানি পান করতে পারেন । এছাড়া তারুণ্য ধরে রাখতেও ডাবের পানি যথেষ্ট ভুমিকা রাখে।

২. ত্বক সুন্দর রাখতে:
ডাবের পানি ত্বকের জন্যও খুবই উপকারী । একটি ডাবের প্রায় ৯৪ শতাংশই পানি থাকে। ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা সহ পুরো দেহের শিরা-উপশিরায় সঠিকভাবে রক্ত চলাচল করতে এই পানি সাহায্য করে। ডাবের পানি বেশি পান করলে কিডনির কাজ করতে সুবিধা হয়, দেহে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়ে। ফলে ত্বকসহ প্রতিটি অঙ্গে পৌঁছায় বিশুদ্ধ রক্ত এবং পুরো দেহ সতেজ ও শক্তিশালী হয়ে উঠে।

৩.  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। ডাবের পানির মধ্যে কিছু এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ভাইরাল উপাদান থাকায় এই পানি ব্যকটেরিয়া ও ভাইরাস মারতে অনেক কার্যকরী ভুমিকা রাখে। তাই প্রত্যেক দিন খাবারসহ অন্যান্য মাধ্যমে আমাদের শরীরে যেসব ব্যকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রবেশ করে সেগুলো মারার জন্য এক গ্লাস ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারী উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের ভেতরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনওভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।

 

৪. হজম শক্তি বৃদ্ধি বদহজম দূর:

হজম সমস্যা সমাধানে  ডাবের পানি কাজ করে।ডাবের পানি পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ বদহজম দূর হয় । ডাবের পানি গ্যাসট্রিক , আলসার , কোলাইটিস , ডিসেন্ট্রি এবং পাইলসের সমস্যা দূরীকরণেও সাহায্য করে।

৫. কিডনির সুরক্ষায়:

ডাবের পানির অসাধারণ স্বাস্থ্যোপকারিতাগুলোর একটা হলো কিডনিতে পাথর জমতে বাঁধা দেওয়া।  স্ফটিকজাতীয় পদার্থের উপস্থিতির ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এই যাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ডাবের পানি কিডনি থেকে এই স্ফটিকজাতীয় পদার্থ মূত্রত্যাগের মাধ্যমে দেহের বাইরে বের করে দিতে যথেষ্ট কার্যকর ভুমিকা রাখে।

৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:
ডাবের পানির প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হৃদঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ডাবের পানি শরীরের ভেতরে অতিরিক্ত সুগার লেভেলকেও নিয়ন্ত্রয়ে আনতে ভুমিকা রাখে। 

৭. হাড় পেশীর গঠনে:

হাড় ও পেশীর সুরক্ষায় ডাবের পানির কোনো বিকল্প নেই। হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখতে ক্যালসিয়াম অতি দরকারি উপাদান। এই প্রয়োজনীয় উপাদানের দ্বারা সমৃদ্ধ থাকে ডাবের পানি। ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায়। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। এছাড়া এতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করে। পেশী গঠন ও সচল রাখতেও কাজে দেয় পানি ডাবের সাহায্য করে।

 

৮. গর্ভবতী স্তন্যদায়ী  মায়ের  স্বাস্থ্য রক্ষায়:

গর্ভবতী ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও প্রকৃতির এক অতুলনীয় দান এই ডাবের পানি। গর্ভকালীন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা কাটাতে যেমন সকালের অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, মাংসপেশিতে টান ইত্যাদি দূর করতে ডাবের পানির তুলনা নেই। বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদেরও নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি তাদের বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।     

৯. হার্টের টনিক হিসেবে :

শরীরে বাজে কোলেস্টেরল বা এল ডি এল-এর পরিমাণ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

১০. মাথা যন্ত্রণা দূরীকরণে :   

ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনর অ্যাটাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত এক গ্লাস ডাবের পানি খেয়ে নেবেন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

১১. কিডনি ফাংশনের উন্নতি ঘটাতে :

 প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিন উপাদানদের ইউরিনের সঙ্গে বের করে দিয়ে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়।

ডাবের পানির অপকারিতা 

১. ডাব নিয়মিত খেলে কিডনি রোগ হয় না৷ আবার কিডনি রোগ হলে ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষেধ৷ কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না৷ ফলে ডাবের পানির পটাশিয়াম ও দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দেয়৷ এই অবস্থায় রোগীর মুত্যু অনিবার্য৷ তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক না৷ ডাবের পানি রোগীকে পান করানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷

২. যারা ওজন কমাতে চান তাদের ডাবের পানি বেশি না খাওয়াই ভাল। কারণ, ডাবের পানি শরীরে ক্যালরির মাত্রা বাড়ায়। অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পানীয় বা ফলের রসের তুলনায় ডাবের পানিতে চিনির পরিমান কম থাকে। তবুও ডাবের পানি খেলে নিমেষে বেড়ে যায় ক্যালরি।

৩. ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে থাকা সোডিয়াম রক্তাচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবেই বেশি তাদের ডাবের পানি প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। তবে সপ্তাহে দু’একদিন খেতেই পারেন।

 

 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা

মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন ও কাজ