লেবুর অসাধারণ পুষ্টিগুন
লেবুর অসাধারণ পুষ্টিগুন:
লেবু (Citrus limon)
লেবুর রস মিশ্রিত পানি পানীয়
হিসেবে চমৎকার। কেবল স্বাদে নয়, গুণেও। বিশেষ করে ভারী খাবার
গ্রহণের সময় পানীয় হিসেবে কোলা বা অন্য
কিছুর বদলে লেবুপানিই সবচেয় ভালো।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, লেবুর রস
মিশ্রিত পানি পাকস্থলী ও অন্ত্রের অন্যান্য অংশ থেকে পাকরস তৈরি ত্বরান্বিত করে।
ভারী খাবারের সঙ্গে লেবুপানি পান করলে গ্যাস কম হবে, পেট
ফাঁপবে কম। এ ছাড়া এটি ডাইউরেটিক ও ল্যাক্সেটিভ হিসেবেও কাজ
করে। অর্থাৎ প্রস্রাব ও মল পরিষ্কার রাখে।
লেবুর পুষ্টিগুন:
বাজারে একেক সময় একেক রকম লেবু পাওয়া
যায় বাজারে। পাতিলেবু, কমলালেবু,
মোসাম্বিলেবু, গন্ধরাজ ও বাতাবিলেবু। ১০০
গ্রাম কাগজি বা পাতিলেবু থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় (ভিটামিন সি ৬৩ মিলিগ্রাম) যা আপেলের ৩২ গুণ ও আঙুরের দ্বিগুণ। আরও পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম ৯০ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি শূন্য
দশমিক ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম, লৌহ শূন্য দশমিক ৩ মিলিগ্রাম। লেবু ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল। এই ভিটামিন দেহে
সঞ্চিত অবস্থায় থাকে না, সে জন্য
শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে প্রতিদিনই ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। জ্বর, সর্দি, কাশি ও
ঠান্ডাজনিত সমস্যায় লেবু অত্যন্ত কার্যকর। লেবুতে থাকা
প্রচুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন
সি দেহের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং
রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুতে পর্যাপ্ত ভিটামিন
সি অ্যান্টি অক্সিডেন্টস হিসেবে কাজ করে দেহে ক্যানসারসহ নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত
থেকে রক্ষা করে।
শিশুদের দৈনিক ২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আবশ্যক।
আসুন জেনে নিন লেবুর অসাধারণ কিছু উপকারিতা-
১. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
লেবুতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমারোহ যা শরীরকে বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। নিয়মিত লেবু খাদ্যতালিকায় রেখে আমারা ক্যান্সারের হাত থেতে রক্ষা পেতে পারি।
২. পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে:
যারা পেটের গোলযোগে ভুগছেন তাদের জন্য লেবু আদর্শ টনিক। পেটের গোলযোগের মধ্যে ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য, আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়, শুরুতে এক গ্লাস লেবু+লবন পানি আপনাকে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেবে। লেবুর সঙ্গে এক চা চামচ মধু হলে আরো ভাল।
৩. ফুসফুসের জন্য ভাল:
লেবু ফুসফুসের যত্ন নেয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দেয়, লেবু শরীরের চর্বি ও লিপিডের মাত্রা কম রাখে।
৪. ক্ষত সারায়:
লেবুর উচ্চ ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যে কোন ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যেমন ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর দমনে লেবু খুব কার্যকারী, মুত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবুর গুরুত্ব রয়েছে।
৫. হাইপার টেনশন কমায়:
যারা খাবারে যথেষ্ট পটাশিয়াম গ্রহণ করে না, তারা সহজেই নান রকম হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে পড়ে। লেবুর রসে যথেষ্ট পরিমান পটাশিয়ামরয়েছে যা হাইপার টেনশন কমাতে সাহয্য করে।
৬. ত্বকের যত্নে:
প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসাবে লেবুর জুড়ি নেই, এটি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে, মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। চামড়ার অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে। লেবুর রস প্রাকৃতিক অ্যানটি সেপটিক। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করে। ব্রণ সারিয়ে তোলে, ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। বয়সের বলিরেখা দূর করে।
৭. মুখের দুর্গন্ধ দুর করে:
মাড়ির ব্যথা, দাঁতের সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। লেবুর পানি খাবার পর দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই।
৮. নখকে সুন্দর করে:
একটুকরা লেবু দিয়ে নখ পলিশ করলে নখ তার বিবর্ণতা থেকে উজ্জল রং ফিরে পায়। লেবুর পানিতে পা, হাত, ডুবিয়ে রাখলেও একটি উপকার হয়।
৯. ওজন কমাতে:
নিয়মিত ফ্রেশ লেবুর জুস+পানি খেলে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহয্য করবে।
১০. পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
শুনলে অবাক হতে হয়, লেবু অম্লীয় হওয়া সত্ত্বেও শরীরে প্রয়োজনে ক্ষারধর্মী আচরণ করে। এটি শরীরে এসিডিটি তৈরি করে না। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রাকে সঠিক অবস্থায় রাখে। লেবুর রস+লবণপানি পান করলে পিএইচ মাত্রা ঠিক থাকে।
১১. গর্ভবতী নারীদের সুস্থতায়:
গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবুজল। এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না বরং গর্ভের শিশুর অনেক বেশি উপকার করে। লেবুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।
১২. শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে:
যাদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তারা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন। যারা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।
১৩. বয়সের ছাপ দূর করে:
বয়সের ছাপ পড়ে বলিরেখার মাধ্যমে। তাছাড়া অনেকের এমনিতেই বলিরেখা পড়তে পারে। লেবুর রস এই বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর। রেখাগুলোতে লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন ও ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
১) যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।
২) লেবুতে কারো কারো অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাই আগে থেকে জেনে নিয়ে লেবু চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ তা নাহলে হিতে-বিপরীত হতে পারে৷
৩) ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা হলে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লেবুপানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে।
৪) অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
৫) অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
৬) লেবুর শরবত বেশি পান করলে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
৭) যেকোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
Comments
Post a Comment