নবম-দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায় (জীবনীশক্তি) প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব- ০৩
নবম-দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায় (জীবনীশক্তি) প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব- ০৩
সালোকসংশ্লেষণ শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ photos (অর্থ: আলোক; এখানে সূর্যালোক) ও synthesis (অর্থ: সংশ্লেষণ, বা তৈরি করা) এর সমন্বয়ে গঠিত। যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবুজ উদ্ভিদ কোষে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে,
পরিবেশ থেকে গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) ও মূল
দ্বারা শোষিত জলের বিক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্যের সংশ্লেষ ঘটে এবং গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ অক্সিজেন প্রকৃতিতে নির্গত হয়, তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে। এই প্রক্রিয়ায় সজীব
উদ্ভিদকোষে উপস্থিত ক্লোরোফ্লিল নামক রঞ্জক আলোকশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং তা উৎপন্ন
শর্করাজাতীয় খাদ্যের মধ্যে স্থিতিশক্তি রূপে সঞ্চিত রাখে।
সালেকসংশ্লেষণ এর বিক্রিয়া:-
6CO2 + 12H2O + তাপ → C6H12O6
+ 6H2O+ 6O2
সালোকসংশ্লেষণের সামগ্রিক প্রক্রিয়া:
কার্বন ডাই-অক্সাইড+পানি (আলো/ক্লোরোফিল)=
গ্লুকোজ + অক্সিজেন + পানি
সালোকসংশ্লেষনকারী অঙ্গসমূহঃ
- পাতার সবুজ অংশ
- কচি সবুজ কাণ্ড
- থ্যালয়েড সবুজ উদ্ভিদের
- ফুলের সবুজ বৃতি ও বৃন্ত
- ফলের সবুজ ত্বক
- সাইটোপ্লাজম
- প্রধান উপাদান
- জল (H2O)
- কার্বন ডাই
অক্সাইড (CO2)
- সূর্যালোক
- ক্লোরোফিল
- ক্যারোটিনয়েড
o কো-এনজাইম
o
ADP(
adenosine diphosphate)
o
NADP(
Nicotinamide adenine dinucleotide phosphate)
o
RuDP(
Ribulose Disphosphate)
o
RuBP(
Ribulose Bisphosphate)
সালালোকসংশ্লেষণ একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 1905 সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল্যাকম্যান (Blackman) এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। পর্যায় দুটি হলো,
(a) আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase)
(b) আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light
independent phase)
(a) আলোকনির্ভর পর্যায় (Light
dependent phase):
আলোকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলো অপরিহার্য। এ
পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট), NADPH (বিজরিত
নিকোটিনামাইড অ্যাডনিন | ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) এবং H+ (হাইড্রোজেন আয়ন বা প্রোটন)
উৎপন্ন হয়। এই রূপান্তরিত শক্তি ATP-এর মধ্যে সঞ্চিত
হয়। এই বিক্রিয়ায় ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরোফিল অণু আলোকরশ্মির
ফোটন (photon) শোষণ করে এবং শোষণকৃত ফোটন থেকে শক্তি
সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট) অজৈব ফসফেট (Pi
= inorganic phosphate)-এর সাথে মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে
ফটোফসফোরাইলেশন (photophosphorylation) বলে। ADP+
Pi ATP সূর্যালোক এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে পানি বিয়োজিত হয়ে
অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ
প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস (photolysis) বলা হয়।
(b) আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় বা
অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase বা dark
phase):
আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে আলোর প্রত্যক্ষ প্রয়োজন পড়ে না,
তবে আলোর উপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। বায়ুমণ্ডলের
co2, পত্ররন্ত্রের মধ্য দিয়ে কোষে প্রবেশ করে। আলোক পর্যায়ে তৈরি ATP, NADPH এবং H+ এর সাহায্যে আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে co2,
বিজরিত হয়ে কার্বোহাইড্রেটে পরিণত হয়। সবুজ উদ্ভিদে co,
বিজারণের তিনটি গতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে যেগুলো হচ্ছে ক্যালভিন চক্র, হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র
এবং ক্রেসুলেসিয়ান এসিড বিপাক। এদের মধ্যে প্রথম দুটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো। ক্যালভিন চক্র বা c3
গতিপথ (Calvin cycle বা c3
cycle): co2, আণ্ডীকরণের এ গতিপথকে আবিষ্কারকদের
নামানুসারে ক্যালভিন—বেনসন ও ব্যাশাম চক্র বা সংক্ষেপে ক্যালভিন চক্র বলা হয়।
ক্যালভিন তার এ আবিষ্কারের জন্য 1961 সালে নোবেল পুরস্কার পান। অধিকাংশ উদ্ভিদে এই প্রক্রিয়ায়। শর্করা তৈরি হয়
এবং প্রথম স্থায়ী পদার্থ 3-কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক
এসিড বলে এই ধরনের উদ্ভিদকে বলে C3 উদ্ভিদ। (ii)
হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র বা C4 গতিপথ
(Hatch and slack cycle বা C4 cycle): অস্ট্রেলীয় । বিজ্ঞানী M,D, Hatch ও C.R.
slack (1966 সালে) co2, বিজারণের
আর একটি গতিপথ আবিষ্কার। করেন। এই গতিপথের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো ৩-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড তাই,
একে C4
গতিপথ বলে। C4, উদ্ভিদে একই
সাথে হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়। C3, উস্কিদের তুলনায় C4
উদ্ভিদে সালােকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি।
সাধারণত ভুট্টা, আখ, অন্যান্য
ঘাসজাতীয় উদি, মুথা ঘাস, অ্যামারন্যথাস
(Armaranthus) ইত্যাদি উদ্ভিদে C4 পরিচালিত হয়।
সালােকসংশ্লেষণের কতগুলাে প্রভাবক দিয়ে প্রভাবিত হয়। প্রভাবকগুলাে কিছু বাহ্যিক এবং কিছু অভ্যন্তরীণ। প্রভাবকের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, পরিমাণের কমবেশি সলােকসংশ্লেষণের পরিমাণও কম-বেশি করে থাকে। প্রভাবকগুলাে হচ্ছে:
(i) আলাে: সালােকসংশ্লেষণে আলাের ভূমিকা সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলাের গুরুত্ব অপরিসীম। পানি এবং cox থেকে শর্করা তৈরির জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস আলাে। সূর্যালােক ক্লোরােফিল সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। সূর্যালােকের প্রভাবেই পত্রর উন্মুক্ত হয়, co, পাতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং খাদ্য প্রস্তুতকরণে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পাতায় যেটুকু আলাে পড়ে, তার অতি সামান্য অংশই সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। আবার আলােকবর্ণালির লাল, নীল, কমলা এবং বেগুনি অংশটুকুতেই সালােকসংশ্লেষণ ভালাে হয়। সবুজ কিংবা হলুদ আলােতে সালােকসংশ্লেষণ ভালাে হয় না। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আলাের পরিমাণ বাড়লে সালােকসংশ্লেষণের হারও বেড়ে যায়। কিন্তু আলাের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে পাতার ভিতরকার এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়, ক্লোরােফিল উৎপাদন কম হয়। ফলে সালােকসংশ্লেষণের হারও কমে যায়। সাধারণত 400 nm থেকে 480 nm এবং 680 nm (ন্যানােমিটার) তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলােতে সালােকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ভালাে হয়।
(ii) কার্বন ডাই-অক্সাইড: কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়া সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। এ প্রক্রিয়ায় যে খাদ্য প্রস্তুত হয় তা কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারণের ফলেই হয়ে থাকে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ 0.03 ভাগ, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শতকরা এক ভাগ পর্যন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারে। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সালােকসংশ্লেষণের পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে পাতার মেসােফিল টিস্যুর কোষের অম্লত্বও বেড়ে যায় এবং পত্ররন্তু বন্ধ হয়ে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।
(iii) তাপমাত্রা: সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা বিশেষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত অতি নিন্ম তাপমাত্রা (0° সেলসিয়াস, এর কাছাকাছি) এবং অতি উচ্চ তাপমাত্রায় (45° সেলসিয়াসের উপরে) এ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য পরিমিত (optimum) তাপমাত্রা হলাে 22° সেলসিয়াস থেকে 35° সেলসিয়াস পর্যন্ত। তাপমাত্রা 22° সেলসিয়াসের কম বা 35 সেলসিয়াসের বেশি হলে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।
(iv) পানি: সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরির উদ্দেশ্যে co, কে বিজারণের জন্য প্রয়ােজনীয় H+ (হাইড্রোজেন আয়ন) পানি থেকেই আসে। পানির ঘাটতি হলে পত্ররন্দ্রের রক্ষীকোষেও সফীতি হারিয়ে রম্ব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাতাস থেকে CO, অনুপ্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত পানি ঘাটতির ফলে এনজাইমের সক্রিয়তা বিনষ্ট হয়ে সালােকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে।
(v) অক্সিজেন বাতাসে অক্সিজেনের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সালেকিসংশ্লেষণের হার কমে যায় আর। অক্সিজেনের ঘনত্ব কমে গেলে সালােকসংশ্লেষণের হার বেড়ে যায়। তবে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে সালােকসংশ্লেষণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।
(vi) খনিজ পদার্থ ক্লোরােফিলের প্রধান উপকরণ হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং ম্যাগনেসিয়াম। লােহার অনুপস্থিতিতে পাতা ক্লোরােফিল সংশ্লেষণ করতে পারে না, ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। কাজেই মাটিতে এসব খনিজের অভাব হলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।
(vi) রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ক্লোরােফর্ম, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন বা কোনাে বিষাক্ত গ্যাস। থাকলে সালােকসংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
(b) অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ
(i) ক্লোরােফিল: সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরােফিলের ভূমিকা পাতার ক্লোরােফিলের পরিমাণের সাথে সালােকসংশ্লেষণের হারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, কারণ। একমাত্র ক্লোরােফিলই আলােকশক্তি গ্রহণ করতে পারে। পুরাতন ক্লোরােপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে যায় এবং তখন। নতুন ক্লোরােপ্লাস্ট সংশ্লেষিত হয়। নতুন ক্লোরােপ্লাস্ট এবং ক্লোরােপ্লস্টের উপাদান সৃষ্টির হারের উপর সালােকসংশ্লেষণের হার নিভরশীল। সালােকসংশ্লেষণ ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য ক্লোরােপ্লাস্টের বিভিন্ন উপাদান সুত এবং প্রচুর পরিমাণে পুনর্গঠিত হওয়া প্রয়ােজন। তবে কোষে খুব বেশি পরিমাণ ক্লোরােফিল থাকলে এনজাইমের অভাব দেখা দেয় এবং সালােকসংশ্লেষণ কমে যায়।
(ii) পাতার বয়স ও সংখ্যা: একেবারে কচি পাতা এবং একেবারে বয়স্ক পাতায় ক্লোরােফিলের পরিমাণ কম থাকে বলে সালােকসংশ্লেষণ কম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্লোরােপ্লাস্টের সংখ্যাও বেশি হয়। মধ্যবয়সী পাতায় সবচেয়ে বেশি সালােকসংশ্লেষণ ঘটে। পাতার সংখ্যা বেশি হলে সালােকসংশ্লেষণ বেশি হয়।
(iii) শর্করার পরিমাণ: সালােকসংশ্লেষণ চলাকালীন শর্করার পরিবহন কম হলে তা সেখানে জমা হয়ে থাকে। বিকেলে পাতায় বেশি শর্করা জমা হয় বলে সালােকসংশ্লেষণের গতি মস্থর হয়।
(iv) পটাশিয়াম, পটাশিয়ামের অভাবে সালােকসংশ্লেষণের পরিমাণ বেশ কমে যেতে দেখা যায়। কারণ, সম্ভবত এ প্রক্রিয়ায় পটাশিয়াম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
(v) এনজাইম: সালােকসংশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের প্রয়ােজন হয়।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব:
i) শক্তি সংরক্ষণ: সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত শক্তি উদ্ভিদ সর্বপ্রথম রাসায়নিক শক্তি হিসেবে নিজের মধ্যে আবদ্ধ রাখে৷ পরবর্তীতে উদ্ভিদ এই রাসায়নিক শক্তিকে খাদ্যে রূপান্তরিত করে ও খাদ্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি গ্রহণ করে। সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি ধারণে সালোকসংশ্লেষণ প্রধান ভূমিকা পালন করে।
ii) উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি: আমরা জানি যে, উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির প্রধান উৎস হচ্ছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া। সবুজ উদ্ভিদ এর মাধ্যমে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে এবং সে খাদ্য দিয়ে তার যাবতীয় চাহিদা পূরণ করে৷
iii) প্রাণীর খাদ্য তৈরি: প্রাণীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল কারণ একমাত্র উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে বলা যায়, প্রাণীজগতে খাদ্য সরবারহে এই প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
iV) বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করা: উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে প্রতিনিয়ত হরেক রকম জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে থাকে। আর এই জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়৷ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত খাদ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে এই শক্তি সরবরাহ করে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া পরোক্ষভাবে বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করে৷
v) জ্বালানি উৎপাদন: উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্যের কিছুটা খরচ করে সিংহভাগ নিজের জন্য সঞ্চিত রাখে৷ উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে (পাতা, ফলমূল, কান্ড) খাদ্য সঞ্চিত থাকে৷ উদ্ভিদ মারা যাওয়ার পর এই সঞ্চিত খাদ্যগুলো জ্বালানিতে রূপান্তরিত হয়। কয়লা, পেট্রোল, তেল এই জ্বালানিগুলো আমরা সাধারণত উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি৷
vi) উদ্ভিদের শারীরিক বর্ধন: উদ্ভিদ দেহে বিপাক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কারণে উদ্ভিদ পুষ্টি লাভ করে। এই পুষ্টি উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সালোকসংশ্লেষণর মাধ্যমেই মূলত উদ্ভিদের পুষ্টি লাভের প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়৷
vii)বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা: উদ্ভিদ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে৷ এটি সম্ভব হয় শুধুমাত্র সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কারণে। আমরা শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি ও অক্সিজেন গ্রহণ করি৷ শুধুমাত্র শ্বসন প্রক্রিয়া থাকলে দেখা যেত বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে ও কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতো৷ কেবলমাত্র, এই প্রক্রিয়ার কারণে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় আছে।
Thanks
ReplyDelete